যাদবপুরের অধ্যাপকের প্রাণ কাড়ল কোভিড, প্রয়াত নৈহাটির চিকিৎসক ‘বিধান রায়’ও

ৰেঙ্গলওয়াজ ব্যুরো :   করোনা সংক্রমণ হু হু করে বেড়েই চলেছে, বাড়ছে মৃত্যুও। তারই মধ্যে বাড়ছে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার হারও। কিন্তু তারই মধ্যে জোড়া দুঃসংবাদ বাংলায়। করোনা সংক্রমণে মারা গেলেন এক অধ্যাপক এবং এক চিকিৎসক। একই দিনে দু-দু’জন জরুরি মানুষ চলে যাওয়ায় নেমেছে শোকের ছায়া।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শুভাশিস বিশ্বাস চলে গেলেন মাত্র ৪৮ বছর বয়সে। জানা গেছে, সম্প্রতি জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ায় টেস্ট করে করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাঁর। এর পরে তাঁকে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যুদ্ধ করেও শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন তিনি।

পাশাপাশি এদিন কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ডক্টর হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের। নৈহাটির এই চিকিৎসক তাঁর জনপ্রিয়তার জন্য পরিচিত ছিলেন নৈহাটির বিধান রায় নামে। গোটা ব্যারাকপুর মহকুমাতেও সুখ্যাতি ছিল তাঁর।

৫ টাকা ফিজের বদলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করতেন ৫৭ বছরের চেস্ট স্পেশ্যালিস্ট। জেনারেল ফিজিসিয়ান হিসেবেও অতি দক্ষ ও ভরসাযোগ্য ছিলেন তিনি। এই করোনা আবহে লকডাউনের মধ্যেও তিনি নিয়মিত চেম্বার করতেন। যতটা সম্ভব রোগী দেখতেন রোজ। কাউকে ফেরাতেন না। সাধারণ মানুষের কাছে ‘ভগবান’ বলে সম্মান পেতেন।

জানা গেছে, কয়েক দিন ধরেই জ্বর ছিল তাঁর। করোনা উপসর্গ নিয়ে সোমবার রাতে বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আপ্রাণ চেষ্টা করা হলেও তাঁর অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠেছিল। সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পরপর দু’বার হার্ট অ্যাট্যাক হয় তাঁর।

অবশেষে মারা যান তিনি। আজ মঙ্গলবার ভোররাতে দাহকার্য সম্পন্ন হয় তাঁর। তাঁর মৃত্যুতে রাজ্যের চিকিৎসক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় বলি হলেন বেশ কয়েক জন চিকিৎসক।

মাসখানেক আগেই করোনা সংক্রমণ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ডক্টর প্রদীপ ভট্টাচার্য, ডক্টর বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং ডক্টর তপন সিনহার। শ্যামনগরের বাসিন্দা, ভাটপাড়া অঞ্চলের ডাক্তার প্রদীপ ভট্টাচার্য খুবই জনপ্রিয় ছিলেন এলাকায়। তিনি কোনও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, ব্যক্তিগত ভাবে রোগী দেখতেন। এলাকাবাসী বিপদে-আপদে প্রায়ই পাশে পেয়েছেন তাঁকে। পঞ্চাশের কোঠায় বয়স ছিল ডাক্তারবাবুর। প্রদীপবাবু এলাকাবাসীর মধ্যে এতই জনপ্রিয় ছিলেন, যে তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য এলাকাবাসীরা চাঁদা দিয়ে টাকাও তুলেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ১০ অগস্ট মারা যান তিনি।

শল্যচিকিৎসক তপন সিনহাও ওই দিনেই হার মেনেছিলেন কোভিড যুদ্ধে। ৬৩ বছর বয়সি এই কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বেশ কিছু দিন ধরেই। ব্যারাকপুরের জনপ্রিয় চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডক্টর বিশ্বজিৎ মণ্ডলও মারা যান কোভিডে।