
ব্যুরো: প্রাণীদের শরীরে করোনার টিকা কোভ্যাক্সিনের প্রয়োগ সফল হয়েছে বলেই জানিয়েছিল ভারত বায়োটেক। আজ, শনিবার তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল টিকার ডোজে বাঁদরদের শরীরে বলিষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে রক্তে। সার্স-কভ-২ ভাইরাসের মোকাবিলা করার মতো ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে টিকার ডোজেই।
টুইট করে ভারত বায়োটেক জানিয়েছে, কোভ্যাক্সিন টিকা প্রাণীদের শরীরেও প্রয়োগ করা হয়েছিল। এই টিকার প্রভাবে অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখা গেছে। প্রাণীদের শরীরেও টিকার প্রভাব বেশ ইতিবাচক। অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণও বাড়ছে। টিকার ‘অ্যানিমাল ট্রায়াল’-এর এই সাফল্য সুরক্ষা ও কার্যকারীতায় নতুন মাত্রা আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত বায়োটেকের ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, করোনার জীবাণু ঢুকিয়ে বাঁদরদের শরীরে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ভাইরাল লোড বেশি হলেও টিকার প্রভাব বেশ কার্যকরী।
কীভাবে প্রাণীদের শরীরে টিকার ট্রায়াল করেছে ভারত বায়োটেক?
আমেরিকার মোডার্না বায়োটেকও তাদের এমআরএনএ টিকা প্রাণীদের শরীরে ইনজেক্ট করেছিল। তবে সেই ট্রায়ালে খুব বেশি সাফল্য মেলেনি। ভারত বায়োটেক তাদের BBV152 ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট তথা কোভ্যাক্সিন টিকার ইঞ্জেকশন দেয় রেসাস প্রজাতির বাঁদরদের (Rhesus macaques) । ভাইরোলজিস্টরা বলেছেন, ২০টি বাঁদরকে চারটি দলে ভাগ করে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। একটি দলকে প্ল্যাসেবো সাপোর্টে রাখা হয়, অন্য তিনটি দলকে তিনটি ভিন্ন ডোজে ০ থেকে ১৪ দিনের ব্যবধানে টিকা দেওয়া হয়। টিকার ডোজ দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইমিউনোগ্লোবিউলিন (IG) অ্যান্ডিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় বাঁদরদের শরীরে।
ট্রায়ালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাঁদরদের শরীরে ভাইরাল স্ট্রেন ঢুকিয়ে সংক্রামিত করে টিকার প্রয়োগের ফলাফল লক্ষ্য করা হয়। টিকার ডোজ দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানে তাদের নাক, মুখ, গলা ও লিভার থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করে ভাইরাল স্ট্রেনের কোনও চিহ্ন মেলেনি। কাজেই টিকা শরীরে ঢুকে ভাইরাস প্রতিরোধী সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছে এটা নিশ্চিত। আরও একটা ইতিবাচক দিক হল টিকার ডোজে কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বাঁদরদের শরীরে। শ্বাসযন্ত্রের কোনও রোগ বা নিউমোনিয়া ধরা পড়েনি কারও মধ্যেই। এটা ট্রায়ালের সবচেয়ে ভাল দিক বলেই জানিয়েছে ভারত বায়োটেক।
আইসিএমআর ও পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) থেকে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন নিয়ে ল্যাবোরেটরিতে তার স্ক্রিনিং করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট BBV152 বানিয়েছে ভারত বায়োটেক। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, করোনার ভাইরাল স্ট্রেন নিষ্ক্রিয় করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। বায়োসেফটি লেভেল-৩ ল্যাবোরেটরির সুবিধা থাকায় ভারত বায়োটেকের ভাইরোলজিস্টরা সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেনের বিশেষ অংশ চিহ্নিত করে তাকে আলাদা করে নিয়েছেন। এরপরে সেই সংক্রামক স্ট্রেনকে বিশেষ বিজ্ঞানসম্মত উপায় পিউরিফাই করে তাকে নিষ্ক্রিয় বা ইনঅ্যাকটিভ (Inactive) করেছেন । এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেন দুর্বল, তার সংক্রমণ ছড়ানো বা দেহকোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়ার ক্ষমতা নেই। কাজেই মানুষের শরীরে প্রয়োগ নিরাপদ ও সুরক্ষিত। অথচ এই ভাইরাল স্ট্রেন শরীরে ঢুকলে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে পারে।