ভারতে অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়াল বন্ধ করতে চলেছে সেরাম, শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোল

ক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভেক্টর ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় ভারতে টিকা তৈরি লাইসেন্স পেয়েছিল সেরাম। ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে কোভিশিল্ড টিকা তৈরি করে দেশের প্রথম সারির এই ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা।

 ব্যুরো:  ভারতে অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়াল নিয়ে টানাপড়েন চলছে। এই টিকা কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্ন তুলে বুধবার রাতেই সেরাম ইনস্টিটিউটকে শো-কজ নোটিস পাঠিয়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিজিসিআই)। সূত্রের খবর, ড্রাগ কন্ট্রোলের নির্দেশ মেনেই অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় তৈরি কোভিশিল্ড টিকার ট্রায়াল বন্ধ করতে চলেছে সেরাম।

সংস্থার সিইও আদর পুনাওয়ালা বলেছেন, “ড্রাগ কন্ট্রোলের নির্দেশ মেনেই কাজ করা হচ্ছে। টিকার ট্রায়াল নিয়ে এর থেকে বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়। আগামী সপ্তাহ থেকে কোভিশিল্ড টিকার তৃতীয় স্তরের ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা ছিল। আপাতত তা বন্ধ রাখা হবে।”

We are reviewing the situation and pausing India trials till @AstraZeneca restarts them. We are following DCGI’s instructions and will not be able to comment further on the same. You can connect with DCGI for more updates on this front.#SII #Latestnews #Covid_19 pic.twitter.com/CUeFY5oLus

— SerumInstituteIndia (@SerumInstIndia) September 10, 2020

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভেক্টর ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় ভারতে টিকা তৈরি লাইসেন্স পেয়েছিল সেরাম। ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে কোভিশিল্ড টিকা তৈরি করে দেশের প্রথম সারির এই ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা। কিন্তু অ্যাস্ট্রজেনেকা সম্প্রতি টিকার ট্রায়াল বন্ধ করে দেওয়ায় প্রভাব পড়ে ভারতেও।  অ্যাস্ট্রজেনেকা জানিয়েছিল টিকার ডোজে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাঁদের মধ্যে দেখা গিয়েছে সে বিষয় মুখ খোলেনি তারা। এরপরেই অক্সফোর্ডের টিকার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অ্যাস্ট্রজেনেকা টিকার ট্রায়াল বন্ধ করলেও ভারতে অক্সফোর্ডের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ থামায়নি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। যে কারণে বুধবার রাতে সেরামকে শো-কজ নোটিশ পাঠায় ডিজিসিআই।

ব্রিটেনের ঘটনার উল্লেখ করে সেরামকে পাঠানো নোটিশে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ভি জি সোমানি জানতে চান, নিরাপত্তার কারণে যেখানে টিকার ট্রায়াল বন্ধ করে দিয়েছে অ্যাস্ট্রজেনেকা সেখানে কীভাবে এখনও টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়ে যাচ্ছে সেরাম। সোমানি আরও জানতে চান, অক্সফোর্ডের টিকার প্রভাবে ব্রিটেনের স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট কেন জমা করেনি সেরাম। অক্সফোর্ডের টিকায় কী গলদ দেখা গেছে সে নিয়েও সেরাম কিছু জানায়নি। যতক্ষণ না সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ড্রাগ কন্ট্রোলের বক্তব্য, যে কোনও টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে যদি স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে সামান্যতমও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই ট্রায়াল বন্ধ করে দেওয়াই নিয়ম। সেরাম সেখানে হাজার জনেরও বেশি মানুষের শরীরে টিকার ইঞ্জেকশন দিচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের চূড়ান্ত ট্রায়ালে রয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

ডিজিসিআইয়ের নোটিসের জবাবে সংস্থার সিইও আদর জানিয়েছিলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ১০০ জনকে কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হয়েছে। এখনও অবধি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অ্যাডভার্স সাইড এফেক্টস দেখা যায়নি। আগামী দিনেও কোভিশিল্ড টিকা ঝুঁকির কারণ হবে না বলেই দাবি ছিল তাঁর। তবে তিনি এও বলেছিলেন, ড্রাগ কন্ট্রোলের যদি আপত্তি থাকে তাহলে ট্রায়াল বন্ধ করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করা হবে। সরকারি নির্দেশিকা মেনেই সব কাজ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ডোজে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে তার জবাবে আদর জানিয়েছিলেন সে বিষয়ে এখনই বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। অ্যাস্ট্রজেনেকা তাদের টিকার ট্রায়ালের রেজাল্ট সামনে না আনা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হওয়ার পরেই ভারতে এই টিকা তৈরির লাইসেন্স পায় সেরাম ইনস্টিটিউট। ব্রিটেনের জেন্নার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন ChAdOx1 nCoV-19 ক্যানডিডেট ডিজাইন করেছে অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্টের টিম। কোভিড ভ্যাকসিন গবেষণায় অক্সফোর্ডের হাত ধরেছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকা। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিনের ফর্মুলাতেই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরি করেছে সেরাম।

অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম দুই পর্বের ট্রায়ালের রেজাল্ট সামনে আসার পরে দেশেও এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের কাছে আবেদন করে সেরাম।  ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম দুই স্তরের ট্রায়াল রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই টিকা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের রক্তে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে। শরীরের টি-কোষও সক্রিয়। কোনও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাই টিকার সুরক্ষা নিয়ে নিশ্চিত হয়েই তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে সেরাম।

দেশে এখন কোভিশিল্ড টিকার দ্বিতীয় স্তরের ট্রায়াল চলছিল। আগামী সপ্তাহ থেকে তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরুর কথা ছিল। দুই পর্বে মোট ১৬০০ জনকে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সেরামের। আদর জানিয়েছেন, দেশের  মোট ১৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টিকার ট্রায়াল হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ (এইমস), পুণে বি জে মেডিক্যাল কলেজ, পাটনার রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ, চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, যোধপুর-এইমস, গোরক্ষপুরের নেহরু হাসপাতাল, বিশাখাপত্তনমের অন্ধ্র মেডিক্যাল কলেজ, মাইসোরের জেএসএস অ্যাকাডেমি অব হাইয়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।