ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে পিছু হটছে লাল ফৌজ, দক্ষিণের পর উত্তর প্যাঙ্গং লেক নিয়ন্ত্রণে আনছে ভারতীয় সেনা পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকাতেও নিজেদের দাপট দেখাল ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে পিছু হটেছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি।

ব্যুরো: দক্ষিণ প্যাঙ্গং হ্রদের উঁচু পাহাড়ি এলাকা ‘কালা টপ’ দখল করে নিয়েছে ভারত। দক্ষিণের এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি এলাকাও এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে। চিন্তা ছিল প্যাঙ্গং লেকের উত্তর প্রান্ত নিয়ে। সেখানেই পাহাড়ি খাঁজ বা ফিঙ্গার এলাকগুলো পরপর বিস্তৃত। এবার পাহাড়ি ফিঙ্গার এলাকাতেও নিজেদের দাপট দেখাতে শুরু করেছে ভারতীয় সেনা। সূত্রের খবর, ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি।

ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, ১৫ জুন গালওয়ানের ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টে দুই দেশের বাহিনীর সংঘাতের পরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত এলাকায় ঢুকে এসেছিল চিনের বাহিনী। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৫ এর মধ্যবর্তী খাঁজে তাঁবু খাটিয়ে বসে গিয়েছিল লাল ফৌজ।  ওই এলাকায় মান্দারিন ভাষায় নিজেদের প্রতীক বানাতেও দেখা গিয়েছিল চিনের বাহিনীকে। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ তীরে নতুন করে অশান্তি তৈরির পরেই ভারতীয় বাহিনী আরও সতর্ক হয়ে যায়। উত্তর সীমাতেও যে চিন তাদের সেনা বাড়ানোর চেষ্টা করবে সেই শঙ্কা আগেই ছিল। তাই একটু একটু করেই ফিঙ্গার এলাকাগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগোতে শুরু করে ভারতীয় সেনারা।

গত ৩০ অগস্ট থেকেই উত্তর প্যাঙ্গং এলাকায় নতুন করে সেনা মোতায়েন করছিল ভারত। সেনা সূত্র আরও জানিয়েছে, ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ অবধি এলাকায় আগে ভারতীয় বাহিনীই টহল দিত। চিনের সেনা ঢুকে পড়ার পরে ওই এলাকায় টহলদারি বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু চিন যবে থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে নিজেদের সামরিক কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে, তবে থেকেই ফিঙ্গার এলাকাগুলো ফের নিজেদের দখলে নেওয়ার কৌশল ঠিক করে ফেলে ভারতের বাহিনী।

১৩ হাজার ৮৬২ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত প্যাঙ্গং সো লেক ভারত, চিন ও তিব্বতের সীমা অবধি বিস্তৃত। উত্তর ও দক্ষিণ ভাগ মিলিয়ে ৬০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা রয়েছে। হ্রদের উত্তর ভাগে মিশেছে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি। ওই দিকেই রয়েছে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪। প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণ ভাগে রয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পাহাড় যা ধাপে ধাপে নেমে গেছে স্পানগুর লেকের দিকে। এই হ্রদ ও তার সংলগ্ন এলাকার দুই তৃতীয়াংশেই নিজেদের অধিকার ফলাবার চেষ্টা করে চিন যা ভারতীয় সেনার তৎপরতায় রুখে দেওয়া গিয়েছে।

গত ৩০ জুন দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার চারটি এলাকা থেকেই নিজেদের বাহিনী সরাবে দুই দেশ। মাঝে তৈরি হবে একটা নিরপেক্ষ এলাকা বা বাফার জ়োন। এই চার এলাকা হল—গোগরা হট স্প্রিং, দেপসাং সমতলভূমি, গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাঙ্গং সো লেক। এই চার এলাকার মধ্যে পিপি ১০ থেকে পিপি ১৩ রয়েছে দেপসাং সেক্টরে, পিপি ১৪ রয়েছে গালওয়ানে, পিপি ১৫ রয়েছে হট স্প্রিং এলাকায়, পিপি ১৭ ও পিপি ১৭এ রয়েছে গোগরায়। ভারতীয় সেনা জানায়, গালওয়ান থেকে সামান্য সেনা সরালেও প্যাঙ্গং লেকের দখল ছাড়েনি চিন। কারণ প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ি এলাকায় দখল নিতে পারলে সেখান থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি ও আকসাই চিন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, অন্যদিকে গালওয়ানে নদীর জল বাড়লে পাহাড়ি খাঁজেই নিরাপদ আশ্রয় মিলবে। প্যাঙ্গং হ্রদের কাছ ঘেঁষেই অবস্থিত ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ তাই পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়েছিল চিনের সেনা। এবার ওই এলাকাতেই ফের আধিপত্য কায়েম করল ভারত।

ভারতীয় বাহিনী জানাচ্ছে, পাহাড়ি এলাকায় নিজেদের অধিকার ফলাতে বার বার ব্যর্থ হয়ে চিন এবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সামরিক কাঠামো তৈরি করতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ত্রিদেশীয় সীমান্ত ডোকলামের কাছে নতুন করে হেলিপোর্ট তৈরি করছে। দৌল বেগ ওল্ডি লাগোয়া আকসাই চিনেও তাদের মিসাইল সিস্টেম বসছে বলে উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে। তবে ভারত গোটা পূর্ব লাদাখজুড়েই নিজেদের শক্তি আরও বাড়িয়ে ফেলেছে বলেই প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর। সীমান্তে বসেছে যুদ্ধট্যাঙ্ক, প্রস্তুত আছে কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম। কারাকোরাম পাসের কাছে হাউইৎজার কামানও বসে গেছে। কাজেই যেদিক থেকেই ঢোকার চেষ্টা করুক না কেন চিনের সেনা, তা প্রবল শক্তি দিয়ে রুখে দিতে সক্ষম ভারতীয় সেনাবাহিনী।