
ৰেঙ্গলওয়াজ ব্যুরো : দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মালদহের বধূকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দিলেন ক্যানিংয়ের মহিলা মাছ বিক্রেতা। মাতলা ১ গ্রামপঞ্চায়েতের ঘোষপাড়া দিনভরই সরগরম ছিল সম্প্রীতির এমন নজিরে।
করোনা পরিস্থিতিতে সেদিন ছিল রাজ্যজুড়ে লকডাউন। রাস্তায় বেরিয়ে কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না ওই বধূ। ফুটপাথে রাত কাটিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ সড়কপথে ট্রেকারে করে ক্যানিং ষ্টেশনে চলে আসেন। সন্ধ্যা থেকে রাত প্রায় আট পর্যন্ত ক্যানিং বাজারে উদভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করতে থাকেন তিনি। ক্যানিং রেলওয়ে ষ্টেশন সংলগ্ন মাছ বিক্রেতা গৃহবধু বাসন্তী মণ্ডলের নজরে পড়েন তিনি। ওই বধূকে কাছে ডেকে জানতে চান কেন তিনি ঘোরাঘুরি করছেন করেন। তখন সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন মালদহের ওই বধূ। বাড়িতে ফিরতে চেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন রুমা।
এরপরেই সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে মুসলিম পরিবারের ওই বধূকে বাসন্তীদেবী তাঁর ঘোষপাড়ার বাড়িতে নিয়ে যান। নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখেন শুক্রবার রাত থেকে। পাশাপাশি তাঁকে তাঁর বাড়িতে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেন মাছ বিক্রেতা বাসন্তীদেবী। ফোন নম্বর নিয়ে মালদহের কালিয়াচক থানার ১৬ মাইল গুরুতলার গ্রামে রুমার বাবার সাবুরুদ্দিন সেখের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। নিখোঁজ মেয়ের খোঁজ পেয়ে মালদহ থেকে মঙ্গলবার রাতেই তড়িঘড়ি সড়ক পথে তাঁরা রওনা দেন ক্যানিংয়ের দিকে।
বুধবার বেলা বারোটা নাগাদ ক্যানিং ষ্টেশন এলাকায় পৌঁছে যায় সাবুরুদ্দিন সেখ । সেখান থেকে স্থানীয় যুবক সিকান্দর সাহানী, তারক দাস, বাপন মন্ডল, নাসিরউদ্দিন লস্করদের সাহায্যে ক্যানিংয়ের ঘোষপাড়ায় বাসন্তী দেবীর বাড়িতে পৌঁছন। সাবুরুদ্দিনকে আদর আপ্যায়ন করেন বাসন্তীদেবী। মধ্যাহ্ন ভোজেরও ব্যবস্থা করেন। তারপর সাবুরুদ্দিনে সেখের হাতে তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেয়ে রুমাকে তুলে দেন।
বাসন্তীদেবী বলেন “রাতের অন্ধকারে রুমাকে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে এসেছিলাম। পাঁচ দিন ধরে আমার মেয়ের মতোই ছিল ও। আমাকে মা বলে ডাকতো। আজ তার পরিবারের হাতে অক্ষত অবস্থায় তাকে তুলে দিতে পেরে একজন মহিলা হিসাবে ভালো লাগছে। তবে ও চলে যাওয়ায় খুব খারাপও লাগছে। কে হিন্দু, কে মুসলমান জানি না। এটুকু জানি ও আমায় মা ডেকেছে।”
মেয়েকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না রুমার বাবা। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে কে যে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাব ভাবিনি। বাসন্তীদেবী আজ থেকে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হলেন। তাঁর এই অবদান কোনও দিনও ভুলব না।’’
বিদায় নেওয়ার সময় দু’চোখের জল বাঁধ মানছিল না রুমার। আর হারিয়ে গিয়ে নয়, এবার ক্যানিংয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসবে বলে জানিয়ে যায় সে।