শ্যুটিং করার আগে বর্ণপরিচয় পড়তে দেওয়া হয়েছিল তৃণা সাহাকে

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং কীভাবে চলছে?

শ্যুটিং যেমন চলে তেমনই চলছে। কিন্তু এখন তো অনেক নিরাপত্তার মাঝে কাজ করতে হচ্ছে, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় সেটে ঢুকছি না হাসপাতালে ঢুকছি। আমাদের যে মেকআপ করছেন, তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে যেন সার্জেন মেকআপ করছে। মাস্ক, ক্যাপ, গ্লাভস পরে থাকে সে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটু অন্যরকমভাবেই এগোচ্ছে শুটিংয়ের কাজ।

কীভাবে ডাক পেলে ‘খড়কুটো’র জন্য?

একেবারেই সহজ ছিল না। নাম করব না, কিন্তু বহু পরিচিত ধারাবাহিক নায়িকাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই চরিত্রটায় অভিনয় করার সুযোগ পাই আমি। ২০ দিনের একটা অডিশন প্রসেস চলেছে। এর সঙ্গে লুক সেটও চলে। লীনা দি, নায়িকাকে দেখতে কেমন সেদিকে জোর না দিয়ে, অভিনয়ের দিকে খুব বেশি নজর দেন। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই আছে, আমার থেকে অনেক সুন্দর দেখতে। কিন্তু চরিত্রটায় কে বেশি মানানসই সেদিকে নজর দেন তিনি। চন্দন সেন, দুলাল লাহিড়ি, কৌশিক রায়ের বিপরীতে অভিনয় করছি। তাঁরা খুবই অভিজ্ঞ। যখন জানতে পারি এঁদের বিপরীতে আমায় অভিনয় করতে হবে, তখন একটু ভয়ও কাজ করেছিল। খড়কুটোর এই চরিত্রটা আমি একদম সহজে পাইনি।

এখন তো কাজটা করছ, সেই ভয়টা কি আর আছে?

কাজটা যে খুব সহজ, কাছে তা নয়। কারণ ওই যে বললাম, বড় বড় অভিজ্ঞ মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। এখানে অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম যদি বল, সেটা হচ্ছে আমার। টেনশনে থাকি রোজই। কিন্তু, সিনিয়ররা খুবই সাহায্য করেন। একটা শটের পর অভিষেক চট্টোপাধ্যায় বা চন্দন সেন যখন বলেন, বাহঃ এই তো খুব ভাল হয়েছে। তখন আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। কাজ করার ইচ্ছাটাও অনেকটা বেড়ে যায়।

সিনিয়রদর সঙ্গে কোনও মজার ঘটনা?

(হাসতে হাসতে) সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করি ঠিকই, কিন্তু গুরুগম্ভীর পরিবেশ একেবারেই নয়। ফ্লোরে প্রচন্ড মজা হয়। কৌশিক দা যদি আমার পিছনে না লাগে, তাহলে তো দিনটাই যায় না। একই ব্যাপার আমার ক্ষেত্রেও, আমিও কৌশিকদাকে লেগপুল করি। আমার সোশাল মিডিয়া সাইট যদি দেখ, দেখবে সিনিয়রদের সঙ্গে স্ন্যাপচ্যাটে মজার ভিডিও তৈরি করি। ভাবতে পারছ, সিনিয়রদের সঙ্গে এইটা আমি করছি। অম্বরীশ দা আমাকে বলছে, এই তুই আমাকেও একটা করে দে। ফ্লোরে কাজের মাঝে, খাওয়া দাওয়া আড্ডা এইগুলো চলতেই থাকে। এটা খুব মজার ইউনিট।

তোমার লেখাপড়া অনেকদূর, ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছ, সেখান থেকে অভিনয় জগতে কীভাবে?

সত্যি বলতে, অভিনেতার চেয়ে পরিচালক হওয়ার ইচ্ছা আমার বেশি। অভিনয়ের আগে আমি অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করি। তারপর অভিনয়ের জন্য ডাক আসে। এর জন্য যে আমাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে, এমনটা নয়। ফেসবুকে ছবি দেখে ওরা আমার সঙ্গে কথা বলে। তবে খোকাবাবুতে অভিনয় করার পর থেকে আমার স্ট্রাগেল শুরু হয়। কারণ আমার বাংলা খুব খারাপ ছিল। আমাকে রীতিমত বর্ণপরিচয় দিয়েছিলেন স্নেহাশিষ চক্রবর্তী। আমি যদি অভিনয়ের কিছু জানি সেটা এক মাত্র স্নেহাশিষ দার জন্যই সম্ভব হয়েছিল। উনি আমার শিক্ষক। আর যদি বলি ক্যামেরার বিষয়ে জানি, সেটার পিছনে রয়েছেন দু’জন- অপর্ণা সেন এবং সৃজিত দা।

অপর্ণা সেন ও সৃজিত দার সঙ্গে কী কাজ করেছ?

আরশিনগরে অপর্না সেনকে আর জুলফিকারে সৃজিতদাকে অ্যাসিস্ট করেছি। কিন্তু সৃজিতদার কাজটা মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয়। কারণ, আমি তখন খোকাবাবু ধারাবাহিকে কাজ করার সুযোগ পাই। যখন ওঁদের থেকে প্রশংসা পাই, তখন আমার পরিচালক হওয়ার ইচ্ছাকে আরও বাড়ে। তাঁরা আমায় ফোন করে বলতেন, “এটা ভালো হয়েছে, ওটা ভালো হয়েছে”।

তৃণা সাহাকে আমরা আগামী দিনে পরিচালক হিসেবে দেখব?

(এক গাল হাসি নিয়ে) একদম, আমার লক্ষ্য তাই। স্বপ্ন তাই। আমি পরিচালক হবই।

নীল চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ে কবে করছেন?

১১ বছর হয়ে গেল, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে মনের মানুষ। তবে বিয়ের প্ল্যান করোনার সময়ে তো নেই। এখন বিয়ে করা মানে লোকজন থাকবে না।

কখন থেকে মনে হল, দর্শকরা তোমাকে চাইছে?

আমার খোকাবাবুর সময়ই মনে হয়েছে। কারণ, খোকাবাবু ধারাবাহিক শুরু হওয়ার পর একদিন গড়িয়াহাটে হাঁটছি, একজন দেখে বলল, ওই দেখ খোকার বউ যাচ্ছে। যখন মাচা শো করতে যাই, প্রায় ১০ হাজার মানুষ যখন রাত একটা-দেড়টার সময় কুড়ি মিনিট আমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল, তখনও বুঝেছিলাম। আমার মনে হয় সেটাই আমার কাছে একটা বড় পাওয়া। আর তখনই বুঝেছিলাম আমাকে দর্শকের পছন্দ হয়েছে।

তোমাকে যদি হঠাৎ করে আর্টিস্ট ফোরামের প্রধান করে দেওয়া হয়, প্রথম তুমি কী বদলানোর চষ্টা করবে?

আর্টিস্ট ফোরামে যারা যে পদে আছে, যেভাবে কাজ করছে তা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। সবাই খুব ভালো কাজ করছে। কিন্তু যদি আমি সেই জায়গাটা পাই, আমি প্রথম নজর রাখব, টেকনিশিয়ানদের দিকে। অনেক টেকনেশিয়ান আছেন, যারা কাজ পায় না। একটা মেগা ধারাবাহিক কবে হবে সেই দিকে চেয়ে থাকে। ওদের জন্য নিয়মগুলো যদি একটু অন্যভাবে সাজানো যায়, সেই দিকটা দেখব।

ইন্ডাস্ট্রির কোন জিনিসটা অভিনেত্রী তৃণা সাহার ভালো লাগে না?

ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কিছু মানুষের দ্বারা জালিয়াতি হয়। টাকা চায়, অভিনয়ের করানোর জন্য। আপকামিং যারা অভিনয় করতে চায়, তাঁরা খুব জালিয়াতদের হাতে পড়ে। যেটা নিয়ে আমি ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছি। লাখ লাখ লোকের সঙ্গে এইটা হচ্ছে। আমি সবাইকে রক্ষা করতে পারব না। কিন্তু দু’জনকেও যদি আমি ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলে সেটা আমার কাছে অ্যাচিভমেন্ট হবে। আমি একটা কথাই বলব, অডিশন দিতে গেলে টাকা লাগে না। কোনও নাম করা প্রোডাকশন হাউজ, চ্যানেল টাকা নেয় না। এই বিষয়ে সতর্কবার্তা জাারি করে বিষয়টা আরও দৃঢ়ভাবে দেখা উচিত ইন্ডাস্ট্রির।

ইন্ডাস্ট্রির কোন জিনিসটা বেশি পছন্দের?

সবটা। আই লভ মাই জব। আমারা খুব ভালোবেসে কাজটা করি। আজকে আমাকে যে ক’জন চেনে, যেটুকু পরিচিতি হয়েছে, এই ইন্ডাস্ট্রির জন্যই।

শুটিংয়ের চাপে নিজেকে সময় দিতে পার?

হ্যাঁ, প্রত্যেকদিন আমি নিজেকে দু’ঘণ্টা হলেও সময় দিয়ে থাকি। সেই সময় আমি ফোন থেকে দূরে থাকি। সময় নিজেকে বের করে নিতে হয়। প্রত্যেক মানুষকেই নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। আমি নিয়মের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। প্রত্যেকদিন কলটাইমে ঢোকার চেষ্টা করি। খুব সমস্যা না হলে, আমি ঘড়ি ধড়ে চলতেই ভালবাসি।