‘মোদীজি অরুণ জেটলির কথা কানে বাজছে… কেন্দ্র ধার করুক, সেস বসিয়ে ধার শোধ হবে’: মমতা কেন্দ্রের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আপনাকে কি মনে করিয়ে দিতে হবে যে গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পণ্য পরিষেবা করের বাস্তবায়ণ নিয়ে আপনি আপত্তি করেছিলেন।

পণ্য পরিষেবা কর বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের জন্য কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর আরও চাপ বাড়াতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোভিডের কারণে জিএসটি আদায় অনেকটাই কম হয়েছে। কেন্দ্র ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ঘাটতির টাকা কেন্দ্র দিতে পারবে না। তবে রাজ্যগুলিকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে দিল্লি।

কেন্দ্রের এই অবস্থানের বিরোধিতা করে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আপনাকে কি মনে করিয়ে দিতে হবে যে গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পণ্য পরিষেবা করের বাস্তবায়ণ নিয়ে আপনি আপত্তি করেছিলেন। শুধু আপনি নয়, অরুণ জেটলি তখন বলেছিলেন, জিএসটি নিয়ে আপনারা আপত্তি জানাচ্ছেন, কারণ রাজ্যগুলির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রে তৎকালীন সরকারের উপর বিজেপির আস্থা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, অরুণ জেটলির সেই কথা এখনও আমার কানে বাজছে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথার অর্থ পরিষ্কার। সে দিন কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের প্রতি যে বিশ্বাসহীনতার কথা বলেছিলেন জেটলিরা, এখন আদতে সেটা করে দেখাচ্ছে মোদী সরকার। জিএসটি বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত লঙ্ঘন করছে। তাঁর কথায়, জিএসটি বাস্তবায়ণের আগে সর্বসম্মত ভাবে স্থির হয়েছিল যে এ জন্য রাজ্যগুলির যদি কোনও আর্থিক ক্ষতি হয় তা হলে কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ দেবে। এ ব্যাপারটা আইনি ভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের সেখানে কোনও ভূমিকা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য আস্থার সম্পর্কের ভিত্তিতে তা স্থির হয়েছিল। আর এখন কিনা সেই অ্যাটর্নি জেনারেলকে দিয়ে বলানো হচ্ছে যে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনও দায় নেই। এটা বিশ্বাসভঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর এটা বড় আঘাত।

গত বৃহস্পতিবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক ছিল। সেখানে কেন্দ্রের রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডে জানিয়েছিলেন, জিএসটি-র জন্য রাজ্যগুলির মোট রাজস্ব ঘাটতি হওয়ার কথা ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনা অতিমহামারীর জন্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, রাজ্যগুলিকে এখন দু’টি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যগুলিকে কম সুদে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হবে। ২০২২ সালের মধ্যে সেই ঋণ শোধ করতে হবে। সেস বসিয়ে ঋণশোধের অর্থ সংগ্রহ করবে রাজ্যগুলি। অথবা রাজ্যগুলি পুরো ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকাই ঋণ নিতে পারবে। কোন রাজ্য কত টাকা ঋণ নেবে, তা জানাতে হবে আগামী সাত দিনের মধ্যে।

কেন্দ্রের সেই প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ আগেই নাকচ করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন চিঠিতে লিখেছেন, ধার নেওয়ার হলে তা কেন্দ্র নিক। রাজ্যগুলি বরং কেন্দ্রকে প্রতিশ্রুতি দেবে সেস বসিয়ে সেই ঋণের টাকা শোধ করা হবে। প্রসঙ্গত, জিএসটি বাস্তবায়নের সময় স্থির হয়েছিল যে এর ফলে রাজস্ব আদায়ে যদি কোনও ঘাটতি হয় তা সেস বসিয়ে মেটানো হবে। পাঁচ বছর ধরে সেস আদায় করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, দরকার হলে পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেস আদায় করা হোক। যতদিন না সুদ সহ কেন্দ্রের নেওয়া ঋণ শোধ হয়ে যাবে ততদিন সেস আদায় চলুক।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও বক্তব্য, কেন্দ্র যে ভাবে তার দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে তাতে রাজ্যগুলি বিপদে পড়ে যাবে। কোভিডের কারণে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে ঠিক মতো বেতন পেনশন দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে দিল্লিকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেছেন, কেন্দ্র ঋণ নিলেও তা মনিটাইজ করতে পারে, রাজ্যের সেই এক্তিয়ার নেই। তা ছাড়া কেন্দ্র খুবই কম সুদে ঋণ নিতে পারে। রাজ্যকে অনেক বেশি হারে সুদ দিতে হয়। এমনিতেই পুরনো ঋণের ভারে অনেক রাজ্য জর্জরিত।

তবে অর্থমন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রশ্নে পাঁচটি রাজ্য কেবল কেন্দ্র বিরোধিতা করছে। এ ব্যাপারে এখনই নমনীয় হওয়ার প্রশ্ন নেই। জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে যে দুই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতেই অটল থাকবে নর্থ ব্লক।