
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুল্যমূল্য বার্তা দিতে গিয়ে বিতর্কের মুখে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
শাহরুখ খানের হিট সিনেমার নামে দু’দিন আগে স্লোগান তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্লোগান ছিল ‘ম্যায় হুঁ না!’ মূলত জয়েন্ট ও নিট পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বরাভয় দিতেই সেই পোস্টার ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির করেছিল শাসকদল।
শনিবার তার পাল্টা টুইট করলেন রাজ্যপাল। ওই পোস্টার-সহ রাজ্যপাল লিখলেন, “ম্যায় হুঁ না নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া ম্যায় ভি হুঁ না!” অর্থাৎ যার মোদ্দা কথা—মমতা যদি বলেন ‘আমি আছি’, তাহলে ‘আমিও আছি।’ যদিও শেষে রাজ্যপাল এদিনও জানান দিয়েছেন, তিনি সংবিধানের প্রতি কতটা নিষ্ঠাবান। বাংলার মানুষের প্রতি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তাঁরকতটা দায়বদ্ধতা রয়েছে, ইত্যাদি প্রভৃতি!
শনিবারের বার বেলায় ধনকড় যা করলেন, তা দেখে অনেকেই বলছেন, রাজ্যপালের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। প্রতিটি বাক্যে সংবিধানের দোহাই দিলেও আসলে তাঁর কাজকর্ম দেখে, কথাবার্তা শুনে এটা স্পষ্ট, রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে ভাবে তিনি রাজ্যের মানুষকে বরাভয় দিতে নেমেছেন, অতীতে এমন ভূমিকায় রাজভবনকে দেখা যায়নি।
রাজভবনের যদিও যুক্তি রয়েছে। ধনকড় বারবারই বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের মানুষের ভালমন্দ দেখভালের অধিকার রয়েছে তাঁর। তিনি সেটাই পালন করছেন। আর বিজেপি শিবিরের নেতারা বলছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও একটা অভিযোজনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চাশ বছর আগে সবকিছু যে ভাবে চলত এখন সেভাবে চলে না। বিশেষ করে এ রাজ্যে শাসক দল ও সরকারের অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগ ও স্বর শোনার কেউ নেই। রাজ্যপাল সহিষ্ণুতার সঙ্গে তা শুনছেন এবং প্রয়োজনে নবান্নের কাছে কৈফিয়ত চাইছেন। হতে পারে সেই মর্মেই রাজ্যপাল বলেছেন ‘ম্যায় ভি হুঁ না’।
রাজ্যপালের সব কথা নিয়ে ইদানিং তৃণমূল দলগত ভাবে প্রতিক্রিয়া দেয় না। কারণ শাসকদলের নেতারা মনে করেন, ওঁর সব কথার জবাব দেওয়া মানে গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়া। ‘ম্যায় ভি হুঁ না’ নিয়ে তৃণমূল সরকারি ভাবে প্রতিক্রিয়া না দিলেও শাসকদলের অনেক নেতাই টিপ্পনি কেটে বলছেন, এবার না দিলীপ ঘোষের চাকরি যায়! রাজ্যপাল যা শুরু করেছেন তাতে ওঁকে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি করে দিতে পারেন যে কোনও দিন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ব্যাপারটা এখন এক অদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। বাংলায় শাসক দল ও সরকার অনেক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ও সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি মানছে না বলে বিরোধীদের অভিযোগ রয়েছে। এও অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসনকে দিয়ে বিরোধীদের দমনের চেষ্টা করছে শাসক দল। কংগ্রেসের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তিন বছর কেটে গেলেও বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না
বিপরীতে রাজ্যপাল সাংবিধানিক পরিধির মধ্যে থেকে রোজ এমন কথা বলছেন, যা বিজেপি তথা বিরোধীদের রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা করে দিচ্ছে। কোনও বিষয়ে তিনি সরকার তথা শাসক দলকে ছেড়ে কথা বলছেন না। যে হেতু পেশায় তিনি আইনজীবী ছিলেন, তাই ফাঁকফোকর রেখে তাঁর টুইটে নানান রকমের ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলছেন। কাউকে ইঙ্গিত করে বলছেন, মোস্ট ফেভারিট। আবার কখনও টুইটে ‘এমএপি’-কে উদ্দেশ করে অর্থবহ কথা বলছেন। স্বাভাবিক ভাবেই বহু মানুষের মনে হচ্ছে রাজ্যপালের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এবং মজার ব্যাপার হল, সংসদীয় গণতন্ত্রের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও তৃণমূল যেমন গায়ে মাখে না, রাজ্যপালও যেন কোনও অভিযোগই গায়ে মাখেন না।