বৃদ্ধা মাকে বেদম প্রহার ছেলে বৌয়ের,ত্রাতার ভুমিকায় এগিয়ে এল নাতি হাসপাতালে ভর্তি আছেন অসুস্থ বৃদ্ধা। ঠাকুমার উপর শারীরিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ বৃদ্ধার নাতির। তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

প্রতিনিধি,দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ছেলে বৌমার অকথ্য অত্যাচার ও মারধরের ঘটনায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বৃদ্ধাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন নাতি। ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিং থানার নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দক্ষিণ অঙ্গদবেড়িয়া গ্রামে।

অঙ্গদবেড়িয়া গ্রামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা বছর আশি বয়সের বৃদ্ধা গুলাল বেওয়া। বছর দশেক আগেই বৃদ্ধার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে ছেলের সংসারেই আশ্রয় নেন বৃদ্ধা মা। কিন্তু একমাত্র ছেলে জমাত আলি লস্কর মা গুলাল বিবিকে খেতে পরতে দিত না বলেই অভিযোগ।একাকী বৃদ্ধা জীবন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে নিরুপায় হয়ে হয়েই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। কিন্তু তারপরও শান্তি আসেনি সংসারে। বৃদ্ধ বয়সের সম্ভব ওই ভিক্ষের টাকা-পয়সাও ছেলে জমাত ও বৌমা কারিমা বিবি লস্কর বৃদ্ধার অলক্ষ্যে প্রায়ই চুরি করে নিত। আর সেই চুরির প্রতিবাদ করলেই ছেলে বৌয়ের হাতে জুটতো বেদম প্রহার।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেছে, জমাতের ছেলে করিমুল্লা লস্কর প্রেম করে বিয়ে করেন পছন্দের মেয়েকে। তার বাবা-মা এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় মহা ফাঁপরে পড়ে যায় জমাত ও করিমার সন্তান করিমুল্লা। শেষমেশ বৃদ্ধা ঠাকুমা গুলালের আশ্রয় নেয় নাতি।

গুলাল বেওয়া তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে নাতি করিমুল্লা ও তার স্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এদিকে ছেলেকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য মায়ের উপর আরো রেগে গিয়ে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় জমাত আলি। স্বামীর মতোই শাশুড়িকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করতো বৌমা করিমাও।

শুক্রবার ১১ই সেপ্টেম্বর লকডাউন থাকায় ভিক্ষাবৃত্তি সেরে বৃহস্পতিবার একটু রাতেই বাড়িতে ফিরেছিলেন বৃদ্ধা গুলাল বেওয়া। বাড়ি ফিরতেই আচমকা ছেলে জমাত আলি ও বৌমা করিমা ঝাঁপিয়ে পড়েন বৃদ্ধার উপর।বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছেলে বৌমার বেদম প্রহারে অজ্ঞান হয়ে যান বৃদ্ধা।

ঠাকুমাকে নিগ্রহ করা হয়েছে এই খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে যান নাতি করিমুল্লা। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ঠাকুমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় বৃদ্ধার নাতি।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই বৃদ্ধা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঠাকুমার উপর অকথ্য অত্যাচারের জন্য বাবা জমাত আলি ও মা করিমা বিবির নামে ক্যানিং থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন করিমুল্লা।

এদিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তিনি জানান “প্রায় প্রতিদিনই বাবা ও মা দুজনেই ঠাকুমার উপর অকথ্য অত্যাচার করত। এমনকি ভিক্ষা করে ঠাকুমা যা আয় করেন, সেই টাকাপয়সাও গায়ের জোরে কেড়ে নেওয়া হত। ঠাকুমার অসাক্ষাতে চুরি করা হত তার জমানো টাকা। প্রতিবাদ করলেই জুটতো বেদম প্রহার। বাবা ও মায়ের এমন কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তির জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।”

ঠাকুমাকে আগলে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হওয়ার জন্য করিমুল্লাকে বাহবা জানিয়ে প্রতিবাদী যুবকের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ক্যানিং থানার পুলিশও।