বাংলাদেশের হিন্দু বিধবারা অধিকার পাবেন স্বামীর সম্পত্তিতে, ঐতিহাসিক রায় ঢাকা হাইকোর্টের

ব্যুরো: স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন বাংলাদেশের হিন্দু পরিবারের বিধবারা। ঢাকা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক এই রায়ে এবার থেকে সে দেশের হিন্দু বিধবারা স্বামীর জমিরও অংশীদারী পাবেন। জানা গেছে, ৮৩ বছর ধরে লড়াই চলছে এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে। অবশেষে এল সাফল্য।

জানা গেছে, বাংলাদেশের হিন্দু আইন অনেকক্ষেত্রেই নানা রকম জটিলতার সম্মুখীন করে সাধারণ মানুষকে। এর সবচেয়ে জটিল ও কঠিন অংশটি হল, কন্যাসন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করার নিয়ম-নীতি। সেই নিয়মে বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হত মেয়েদের। মৃত ব্যক্তির ছেলে থাকলে কখনওই সম্পত্তির ভাগ পেতেন না তাঁর মেয়েরা। আর ছেলে না থাকলে, কেবল মেয়ে থাকলে, তবে অবিবাহিত মেয়েরা অধিকার পেতেন। আর বিয়ে হয়ে গেলে, তিনি যদি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন, তবেই সেই মেয়েরা একমাত্র বাবার সম্পত্তির অধিকার পেতেন।

এর ফলে যে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, অথচ পুত্রসন্তান নেই, যে মেয়ে বিধবা হয়েছেন বিয়ের পরে, যাঁদের মেয়ে হয়েছে, তাঁরা কখনওই বাবার সম্পত্তির কোনও ভাগ পেতেন না। কন্যাসন্তানের ছেলে আছে কিনা, সেটাই ছিল বাবার সম্পত্তি পাওয়ার মাপকাঠি। ১৯৩৭ সাল থেকে এমনই চলে আসছে সে দেশে।

কয়েক বছর আগে, ২০১২ সালে বাংলাদেশের আইন কমিশন একটি নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করে। তাতে বলা হয়, হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে সমান ভাগ হওয়া উচিত। ছেলে থাকলে তিনি যতটা পাবেন, মেয়ে থাকলেও ততটাই পাবেন বাবার সম্পত্তি। তার আট বছর পরে এ বিষয়ে ঐতিহাসিক রায় দিল ঢাকা হাইকোর্ট।
অন্য দিকে হিন্দু বিধবা সম্পত্তি আইনে স্বামীর বসত ভিটাতেই শুধু বিধবা নারীদের অধিকার ছিল এতদিন। এবার থেকে মিলবে অন্য সম্পত্তির ভাগও। তবে আদালত মনে করিয়ে দিয়েছে, সম্পত্তির ভাগ মিলবে, অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৬ সালে। সে বছরে খুলনার আদালতে গৌরীদাসী নামের একজন বিধবা মহিলা স্বামীর কৃষিজমি অধিকার দাবি করে মামলা করেছিলেন আদালতে। গৌরীদাসীর আবেদনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মৃত স্বামীর ভাই জ্যোতিন্দ্রনাথ মণ্ডল। জ্যোতিন্দ্রবাবুর দাবি ছিল, বিধবা বৌদির কোনও ভাগ নেই তাঁর মৃত দাদার জমিতে।

সে দেশের এতদিনের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, যাঁরা মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধে শাস্ত্রমতে পিণ্ডদান করতে পারেন তাঁরাই একমাত্র সম্পত্তির অধিকার পেতেন। ফলে স্ত্রীরা এই অধিকার কখনওই পেতেন না।

কিন্তু খুলনার জজ আদালত রায় দেয়, স্বামীর কৃষিজমিতে অধিকার রয়েছে স্ত্রীর। তখন এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টেও আপিল করেন জ্যোতিন্দ্র। সেই মামলাই চলছিল বহু দিন ধরে। ইতিমধ্যে ২০১২ সালের আইন সুপারিশে হিন্দু কন্যাসন্তানদের জন্য আবেদন করা হলেও, হিন্দু বিধবাদের জন্য কিছু বলা হয়নি। কিন্তু ৯৬ সালের সেই মামলায় এত বছর পরে, হিন্দু বিধবার স্বামীর সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার পক্ষেই রায় দিল হাইকোর্ট।