প্রশান্ত কিশোরের ডাক ফিরিয়েছি, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন’, বিস্ফোরক দাবি ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়কের

গত কদিন ধরেই বাম শিবিরে কানাঘুঁষো চলছিল যে তৃণমূলের তরফে তাঁদের বিধায়কদের দলবদলের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এ বার প্রকাশ্যে সেই দাবি জানালেন, ফরওয়ার্ড ব্লকের দাপুটে নেতা আলি ইমরান রামজ। তাঁর দাবি, তৃণমূলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর তাঁর সঙ্গে দেখা করে দলবদলের প্রস্তাব দিয়েছেন। তৃণমূল ফের ক্ষমতায় এলে তাঁকে মন্ত্রী করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে ইমরান জানিয়েছেন, প্রশান্ত কিশোরের এই প্রস্তাব সেদিনই ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এও জানিয়ে দিয়েছেন, ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও আনুগত্য অপরিসীম।

চাকুলিয়া থেকে বিধানসভায় তিন বার নির্বাচিত হয়েছেন আলি ইমরান রামজ। এলাকায় ও রাজনৈতিক মহলে তিনি ভিক্টর বলেই পরিচিত। বিধানসভায় বিরোধীদের মধ্যে বলিয়ে কইয়ে তুখোর নেতা-বক্তাদের মধ্যে ইমরান তথা ভিক্টরের নামডাক রয়েছে। এলাকাতেও জনপ্রিয়।

ইমরানের এই দাবি নিয়ে দ্য ওয়ালের তরফে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনওভাবে তাঁর ফোনে কানেক্ট করা যায়নি। এ ব্যাপারে আই প্যাকের এক প্রতিনিধির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। ইমরানের দাবি নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের কোনও প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা তা তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি জানান, এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে না।

দ্য ওয়ালকে ইমরান জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল জুলাই মাসের গোড়ার দিকে। তাঁকে বিভিন্ন নম্বর থেকে নাকি ফোন করা শুরু করেছিলেন আই প্যাকের সদস্যরা। প্রস্তাব একটাই তৃণমূলে যোগ দেওয়া। ইমরান বলেন, এমন নাছোড় দেখে আমি ওদের বলি, প্রশান্ত কিশোর নিজে কেন ফোন করছেন না।

এর পর ১৭ জুলাই কলকাতায় একটি অভিজাত হোটেলে সস্ত্রীক নৈশভোজে এসেছিলেন ইমরান। ভিক্টরের দাবি, তখন খোদ প্রশান্ত কিশোরই তাঁকে ফোন করেন। ভিক্টরের কথায়, “আমি ওনাকে বলি যে স্ত্রীকে নিয়ে ডিনারে এসেছি এখন কথা বলতে পারব না। আর আপনি তৃণমূলের পরামর্শদাতা। আমি বিরোধীদলের বিধায়ক। কী হবে কথা বলে? কিন্তু তার পরেও প্রশান্ত কিশোর বলেন, মাত্র ১০ মিনিট হলেই হবে।” ইমরান তাতে সম্মতি দেন। এর কিছুক্ষণ পরই নাকি সাদা কুর্তা পাজামা পরে সেখানে পৌঁছে যান প্রশান্ত কিশোর।

ভিক্টরের দাবি, প্রশান্ত কিশোর তাঁকে বলেন, আপনি যে কোনও তিনটি দফতরের নাম বলুন। তৃণমূলের টিকিটে জিতলে আগামী মন্ত্রিসভায় সেই তিনটি দফতরের মধ্যে যে কোনও একটি দফতরের মন্ত্রী করা হবে আপনাকে। পাঁচ-সাত মিনিট ধরে প্রশান্তের নানা প্রস্তাব শোনেন তিনি। তার পর তিনি বলা শুরু করেন।

আলি ইমরান রামজের কথায়, “তৃণমূলের গত ৯ বছরে শাসনকালে ১০ বারের বেশি আমার কাছে দলবদলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রী, পর্যবেক্ষক ও জেলা সভাপতিরা। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে টিকিট দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজি হইনি।”

চাকুলিয়ার এই বাম বিধায়ক বলেন, “আমি প্রশান্ত কিশোরকে বলেছি, আমার বাবা ছিলেন রমজান আলি। দিনাজপুর জেলার বামপন্থী নেতা। কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করতেন না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে দিনাজপুরে নিজে গিয়ে খোঁজ করে আসতে পারেন। আমার কাকার নাম হাফিজ আলম সৈরানি। তিনিও ফরওয়ার্ড ব্লকের দীর্ঘ দিনের নেতা। আমাদের পরিবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে দেখে ফরওয়ার্ড ব্লক করতে শুরু করেছিল। আজও আমি সুভাষচন্দ্র বসুকে আমার নেতা মনে করি। তাই অন্য কাউকে সেই জায়গায় বসাতে পারব না।”