প্রতিনিধি মুর্শিদাবাদ: :চরম নারকীয়ভাবে বাবার হাতে খুন হল ১ বছরের শিশুকন্যা, রেহাই পেল না তার মাও। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে নিজের শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে পিটিয়ে খুন করেন গুণধর স্বামী। পরবর্তীতে তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য মৃতদেহের সারা গায়ে ইলেকট্রিকের তার জড়িয়ে থাকে আত্মহত্যা প্রমাণের চেষ্টাও করা হয়। বুধবার রাতের এই ঘটনা চাউর হতেই বৃহস্পতিবার ৩রা সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার চোয়া এলাকার ছাতিমতলা গ্রামে এলাকাবাসীদের মধ্যে অশান্তি ছড়ায়।
পুলিশসূত্রে জানা গেছে মৃত মা ও মেয়ের নাম যথাক্রমেপিঙ্কি বিবি (২৭)ও রানী খাতুন (১)। মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন,” মৃতের পরিবারের তরফে হরিহরপাড়া থানার নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৪ জনের নামে। পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।”
মূল অভিযুক্ত মৃত পিঙ্কি বিবির স্বামী মিলন শেখ ঘটনার পর থেকেই পলাতক। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ঘটনায় অভিযুক্ত বাকিতিনজনের মধ্যে মিলনের বাবা ইমদাদুল শেখকে আটক করেছে। পাশাপাশি মিলনের মা ও তার বোনের খোঁজে এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পেশায় কৃষিজীবী মিলন শেখের সঙ্গে বছর কয়েক আগে সামাজিকভাবেই দেখাশোনা করে বিয়ে হয় পিঙ্কি বিবির। শুরুতে সব ঠিক থাকলেও, সম্প্রতি মাসকয়েক ধরে পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর গ্রামের এক অবিবাহিতা মাঝবয়সী মহিলার সঙ্গে মিলন শেখের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয় বলে অভিযোগ। মৃতার পরিবারের বক্তব্য অনুসারে, মিলন তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে তালাক না দিয়েই গোপনে পাশের গ্রামের ওই মহিলাকে বিয়ে করে সেখানেই থাকতে শুরু করেন। মাঝেমধ্যেই বাড়িতে ফিরে এসে স্ত্রীর উপর চাউর হতেন তিনি। চলতো অকথ্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। । ঘটনার প্রতিবাদ করলে বিনিময়ে জুটতো আরও অত্যাচার। স্বামীর পাশাপাশি শাশুড়ি ননদও পিঙ্কির উপর দিনের পর দিন শারীরিক নিগ্রহ চালাতো বলে অভিযোগ।
পিঙ্কির বাবা মোজাম্মেল খান বলেন,”জামাইয়ের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মেয়ে তার প্রতিবাদ করে। ফলস্বরূপ জামাই মিলন সহ তার পরিবারের সকলে মিলে পরিকল্পনা করে আমার মেয়ে ও নাতনির উপর রাতভর অত্যাচার করে। শেষ পর্যন্ত শ্বাসরোধকরে তাদের খুন করে এবং তথ্য প্রমাণ লোপাট করে এই ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে সাজানোর জন্য ওদের গায়ে ইলেকট্রিকের তার জড়িয়ে দেয়”।প্রতিবেশীদের তরফেও জানা গেছে, মিলন শেখ প্রায়শই তার স্ত্রী ও এক বছরের ওই দুধের শিশুর ওপর অত্যাচার চালাত। তার দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ যার সঙ্গে গোপনে পরকীয়া চলছিল ওই মহিলার কথাতেই না কি মাঝেমধ্যেই বাড়িতে চড়াও হয়ে পিঙ্কিকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করতো সে। এই ঘটনায় পিংকির শাশুড়ি, শ্বশুর এবং ননদেরও যথেষ্ট মদত ছিলো। মিলনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ওই মহিলারও খোঁজ চালানো হচ্ছে বলে পুলিশসূত্রে জানানো হয়।
তবে মিলন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী দুজনেই ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে়। অভিযুক্ত মিলন ও তার পরিবারের সদস্যদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে পিঙ্কির পরিবারের সদস্যরা।