
১৯৮৪ সালের ঘটনা। লোকসভা ভোট আসন্ন। বাংলায় ৪২ টি আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী বাছাইয়ে অন্যতম দায়িত্ব তখন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপর। সে ব্যাপারে তখন ঘন ঘন মিটিং হচ্ছে দিল্লি কলকাতায়। কিন্তু যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য তখনও যুৎসই কোনও প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ঘরোয়া আলোচনায় প্রণববাবু পরে জানিয়েছিলেন, এমনই এক বৈঠকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁর সন্ধানে একটি মেয়ে রয়েছেন। কম বয়স। কিন্তু প্রবল আগ্রাসী ও লড়াকু। প্রণববাবু কৌতূহলী হয়ে জানতে চান, কে সেই মেয়ে? সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রস্তাব মেনে নেন প্রণববাবু।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সম্পর্কের শুরু তখন থেকে। সোমবার সন্ধ্যায় প্রণববাবুর মৃত্যুর পর সেই স্মৃতি রোমন্থন করলেন মমতাও। বললেন, “ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সঙ্গে একটা যুগের অবসান হল। বহু দশক ধরে একজন অভিভাবকের মতো ছিলেন তিনি। আমার প্রথমবার সংসদে সদস্য হওয়া থেকে শুরু করে তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি। মন্ত্রিসভায় আমার বর্ষীয়ান সতীর্থ ছিলেন তিনি, আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী তখন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন তিনি। দিল্লিতে গিয়ে প্রণবদার সঙ্গে দেখা হবে না, ভাবতেই পারছি না। রাজনীতি থেকে অর্থনীতিতে সবেতেই প্রাজ্ঞ ছিলেন তিনি। তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।”
প্রণববাবুর সঙ্গে মমতার রাজনৈতিক সম্পর্কে রৌদ্রচ্ছায়া ছিল ঠিকই, তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবর অটুট ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা যখন দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, তখন মুঠো মুঠো এক্লেয়ার্স নিয়ে যেতেন। হাই সুগার থাকলেও সেগুলো পকেটে ভরে রাখতেন প্রণববাবু। পরে একটা করে বের খেতেন। আবার পুজোতে বরাবর মমতাকে শাড়ি পাঠাতেন প্রণব-জায়া। দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক এতটাই ছিল যে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবার প্রণববাবুর জন্য স্যুটের কাপড় পাঠিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে টেলরও পাঠিয়েছিলেন মাপ নিতে। পরে সেলাই করে সেই স্যুট পাঠিয়েছিলেন প্রণবকে। একবার বিদেশ সফরে সেই স্যুট পরে গিয়েছিলেন প্রণব। পরে সফরকালেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
শেষ দিকে ২০১৭ সালে প্রণববাবুকে একবার দার্জিলিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে দার্জিলিংয়ে এসেছিলেন তিনি। মমতার আতিথেয়তায় সেবার খুবই মুগ্ধ ছিলেন প্রণববাবু। পরে বলেছিলেন, মুন্নি (শর্মিষ্ঠা) আর মমতা তো দুই বোনের মতোই আমাকে যত্ন করেছে ওখানে। মমতা বলেছে, আমাকে বোরোলি মাছ রান্না করে খাওয়াবে।