তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়বে রাজ্য, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, ‘ভোট-ফান্ডের বন্দোবস্ত’, খোঁচা বাম-বিজেপির

নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল বুধবার। সেই বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়বে রাজ্য সরকার। তাঁর কথায়, “কোনও সংস্থা যদি এই প্রকল্পে রাজ‍্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় তাহলে টেন্ডারের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারে।”

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা মাত্র রে রে করে সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছে বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধীরা। রাজ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠার প্রস্তাবে তাঁদের আপত্তি নেই। তাঁদের প্রশ্ন এর প্রক্রিয়াগত দিক নিয়ে। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়ে বাম-বিজেপির বক্তব্য, হতে পারে ভোটের জন্য ফান্ড জোগাড়ের চেষ্টা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, কেন্দ্রকে অনেক বার এ ব্যাপারে বলা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, দিল্লি এ বিষয়ে কোনও গা করেনি। তাই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজেদের উদ্যোগেই এই বন্দর গড়ে তোলা হবে।

পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “শুনলাম মুখ্যমন্ত্রী নাকি বলেছেন, রাজ্যের উদ্যোগে তাজপুরে গভীর সমুদ্রবন্দর করবেন। সঙ্গে এও বলেছেন, কোনও সংস্থা যদি যুক্ত হতে চায় তাহলে টেন্ডার ডেকে তা করা হবে। তা আমরা বলি কি, মুখ্যমন্ত্রী কি ১০ বছর ধরে ঘুমোচ্ছিলেন? দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ার কথা ছিল। তখন কেন্দ্রে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তৃণমূলের। যদিও এখন তিনি বিজেপিতে। সেটা ঘেঁটে দিয়েছিল তৃণমূল। আর এখন ভোটের আগে মনে পড়েছে?” সিপিএমের এই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আক্রমণের সুর আরও খানিকটা চড়িয়ে বলেন,  “এটা ভোটের আগে নোটের বন্দোবস্ত হচ্ছে? টেন্ডার তো ভোটের আগে খোলার টাইমই পাবে না। আর ভোটের পড়ে তো তৃণমূলের সরকারটাই সমুদ্রে চলে যাবে। এই ঘোষণার কোনও মানে আছে!”

রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, “এটা হল তোলাবাজির নতুন সরকারি কায়দা। এসব বুঝতে কারও বাকি নেই!” তিনি আরও বলেন, “এখন সুদীপ্ত সেন, গৌতম কুণ্ডু, শ্রীকান্ত মোহতা—তৃণমূলকে টাকা দেওয়ার সবকটা মাথা জেলে। দিদিমণির ছবিও তাই বিক্রি হচ্ছে না! একুশের ভোটের আগে তাই বন্দরের নামে টেন্ডার ডেকে লুঠের রাস্তা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

অতীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে তখন এই প্রশ্ন উঠেছিল যে, সাগর পর্যন্ত পণ্য পরিবহণ করতে উপযুক্ত রেল করিডর গড়ে তুলতে হবে। তাতে খরচের বহর হবে বিপুল। তা ছাড়া কোনও বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়নি। এর পর বর্তমান সরকারের আমলে বলা হয়, গভীর বন্দর গড়ে তোলার চেষ্টা হবে তাজপুরে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানিয়েছেন দিঘায় কেবল ল‍্যান্ডিং স্টেশন হবে। এই প্রকল্প করবে জিও। চেন্নাই ও মুম্ব‌ইতেও একই জিনিস হয়েছে বলে জানান মমতা। ডেটা সেন্টারের কাজের জন‍্য এটা খুবই জরুরি বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দিঘায় এই ডেটা সেন্টার হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্ত সাইবার কোম্পানির জন‍্য খুবই সহায়ক হবে।” এরজন্য ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০২০’ ঠিক করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।