
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োগ বহুদিনের। ক্যানসার রেডিয়েশনের নানা উন্নত পদ্ধতিও আবিষ্কার হয়েছে। যার মধ্যে একটি হল হ্যালসিয়ন রেডিয়েশন থেরাপি সিস্টেম। গতানুগতিক রেডিয়েশনের থেকে অনেক দ্রুত এবং আধুনিক হ্যালসিয়ন রেডিয়েশন সিস্টেম। এতদিন দেশের বাইরেই এই পদ্ধতির চর্চা ছিল। প্রথমবার পূর্ব ভারতে এই রেডিয়েশন সিস্টেম নিয়ে এল অ্যাপোলো গ্লেনেগলস ক্যানসার হাসপাতাল।
হ্যালসিয়ন থেরাপি শুরু হলে ক্যানসার চিকিৎসার নতুন দিক খুলে যাবে বলেই মনে করছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের অঙ্কোলজিস্টরা। ভারতে যেভাবে ক্যানসার রোগীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে উন্নতমানের থেরাপির প্রয়োগ না হলে এই মারণ রোগকে ঠেকানো খুব মুশকিল। সাধারণ রেডিয়েশন থেরাপিতে যা সম্ভব নয়, সেটাই করতে পারে হ্যালসিয়ন রেডিয়েশন সিস্টেম। সহজ করে বলতে গেলে, ক্যানসার রেডিয়েশন সিস্টেমের অন্যতম আধুনিক পদ্ধতিই হল হ্যালসিয়ন সিস্টেম। অনেক তাড়াতাড়ি এবং সঠিকভাবে এই থেরাপির প্রয়োগ করা যায় ক্যানসার রোগীদের উপর।
এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে বাইরে থেকে প্রচণ্ড গতির রশ্মি প্রয়োগ করে শরীরের ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। সাধারণত এক্স-রে প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা, তবে ইদানীং অনেক আধুনিক পদ্ধতিও আবিষ্কার হয়েছে যেমন প্রোটন বিম থেরাপি। শরীরে ছড়িয়ে পড়া টিউমার কোষ বা ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকে নির্মূল করতে অনেক সময় অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয় না। তখন রেডিয়েশন দিতে হয়। এক্স-রে বা আলোর গতিতে ছুটে চলা প্রটোন কণার আঘাতে ক্যানসার কোষগুলিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। রেডিয়েশন থেরাপিতে এমনভাবে টার্গেট স্থির করা হয় যে মেশিন থেকে বের হওয়া রশ্মি বা প্রোটন কণা শুধুমাত্র আক্রান্ত কোষকেই ধ্বংস করবে, আশপাশের সুস্থ কোষে ছোঁয়াও লাগবে না।
হ্যালসিয়ন রেডিয়েশন থেরাপি সিস্টেম কী করবে?
হ্যালসিয়নকে বলা হয় ‘ইমেজ গাইডেড ইনটেনসিটি-মডুলেটেড রেডিয়েশন থেরাপি’ (IMRT) বা ‘ভলুমেট্রিক আর্ক থেরাপি’ (VMAT) । এর বিশেষত্ব হল কম্পিউটার মডেলের সাহায্য দ্বিমাত্রিক ছবি তুলে সঠিক টার্গেটে ক্যানসার কোষকে রশ্মি ছুড়ে কাবু করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রচণ্ড শক্তি এক্স-রে বিম প্রয়োগ করেন অঙ্কোলজিস্টরা। খুব কম সময়ের মধ্যে হ্যালসিয়ন রেডিয়েশন সঠিক নিশানায় ছুটে গিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।
হ্যালসিয়ন রেডিয়েশনের আরও একটা বিশেষত্ব হল টিউমার কোষের আকার, তার সঠিক অবস্থান খুব দ্রুত বের করতে পারে এই মেশিন। সেই অনুযায়ী রেডিয়েশন বিমের গতি ও দিক নির্ধারণ করা যায়। সাধারণ রেডিয়েশন সিস্টেমে প্রচণ্ড আওয়াজ হয়, কিন্তু এই সিস্টেমে তেমনটা হয় না। প্রায় নিখুঁত এই যন্ত্র ঘুরিয়ে নানা দিকের ক্যানসার বা টিউমার কোষগুলিকে নিশানায় আনা যায়। এমন হিসেব কষে টার্গেট স্থির করা যায়, যাতে সুস্থ কোষগুলিতে কোনও প্রভাব না পড়ে। সংক্রামিত কোষেই পুরো রেডিয়েশন গিয়ে পৌঁছয় এবং কাজও হয় দ্রুত।
অ্যাপোলো গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতাপ সি রেড্ডি বলেছেন, “ক্যানসার রোগীদের সুস্থ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তাই ক্যানসার চিকিৎসায় আরও উন্নতমানের ডিভাইস ও থেরাপির প্রয়োগ করতে চলেছি। পূর্ব ভারতে প্রথম আধুনিক হ্যালসিয়ন রেডিয়েশন সিস্টেম আনল অ্যাপোলো হাসপাতাল। আমরা গর্বিত।” তিনি আরও বলেন, গোটা পূর্ব ভারতের ক্যানসার রোগীরাই এই রেডিয়েশন থেরাপির সুবিধা পাবেন। মারণ রোগ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই এই থেরাপিতে রুখে দেওয়া যাবে। ক্যানসারে মৃত্যুহার আরও কমবে দেশে।