নিজস্ব প্রতিনিধি : ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে 1756 সালে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল , যদিও বিষয়টি বিতর্কিত , অপর আরেকটি মতানুযায়ী কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীর পুজোর শুভসূচনা কাল 1762 সাল । প্রচলিত কাহিনী অনুসারে জানা যায় কৃষ্ণ নগরের রাজা কর দিতে না পারায় রাজাকে কারারুদ্ধ করেছিলেন তত্কালীন বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁ 1754 সালে । পরে রাজা যখন কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, সেই দিনটা ছিল দুর্গা পুজোর দশমীর দিন । নৌকা করে বাড়ি ফেরা পথে হঠাৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় । সেই সময় স্বপ্নে এক রক্ত বর্না চতুর্ভুজা কুমারী দেবীর দর্শন পান রাজা । সেই দেবী তাকে আদেশ করেছিলেন আগামী কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে তার পূজা করতে । তবে আরো একটি কাহিনী অনুযায়ী জানা যায় মিরকাশিম রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র ও তার পুত্র শিব চন্দ্রকে বন্দী করেছিলেন ইংরেজদের অনুচর সন্দেহে । এমনকি রাজার প্রাণ নাশেরও হুমকি দিয়েছিলেন বলে শোনা যায় । রাজা তার সেই প্রাণ নাশের হুমকির কথা তার দূত মারফত মেরতলার প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কালী শঙ্কর মৈত্রের নিকট প্রেরণ করেন যিনি তার প্রাণ রক্ষার প্রার্থনা জানিয়েছিলেন । আবার কৃষ্ণ চন্দ্রের উত্তর পুরুষ সৌমিশ চন্দ্র রায়ের সূত্রে পরবর্তী কালে জানা গেছে , কারাগারেই রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায় এক কুমারী দেবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন , সেই দেবীর কাছ থেকে রাজা কারাগার থেকে মুক্তি লাভের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তিনি মুক্তি পেয়ে ছিলেন । যদিও ইতিহাস সূত্রে জানা যায় স্বপ্নে দেখা ওই কুমারী ছিলেন আসলে দেবী চণ্ডী প্রাচীন কালেও যার পূজা অর্চনা করার ইতিহাস বর্ণিত রয়েছে । এবার এটাও জানা যায় কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে ওই দেবী পূজা করার রেওয়াজ ছিল । সেই সূত্রে রাজা অত্যন্ত তত্পরতার সাথেই তার আলয়ে জগদ্ধাত্রী মায়ের আরাধনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । আবার সৌমীশ চন্দ্র রায়ের সূত্রে আরো জানা গেছে রাজা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তার বিশেষ কোনো দরকারে চলে গিয়েছিলেন চন্দন নগরে তার বন্ধু ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর কাছে । সেখানে যাওয়ার আগে পুজোর সমস্ত দায়িত্ব সমর্পণ করেছিলেন তার পুত্র শিব চন্দ্র এবং গোপাল ভাঁড়ের হাতে । এই গোপাল ভাঁড় এবং শিব চন্দ্রের নেতৃত্বেই কৃষ্ণ নগরের রাজ বাড়িতে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছিল । তবে রাজা পরের দিন ভোর বেলায় ফিরে পুজোর অঞ্জলী দিয়েছিলেন বলেই জানা গেছে । কৃষ্ণ নগরের রাজ বাড়ির প্রতিমা টি আকৃতিতে অনেক টাই ছোট এবং মাতৃ মূর্তি দেখতেও অন্য রকমের । এর কারণ খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র ঠিক যে রকম আকৃতির কুমারী দেবীর স্বপ্ন পেয়ে ছিলেন ঠিক সেই আদলেই তৈরি করা এই মাতৃ মূর্তি । তবে পাল ও সেন যুগেও এই জগদ্ধাত্রী দেবীর আরাধনা করা হতো বলে ইতিহাস সূত্রে জানা যায় । রাজ বাড়ির পুজোর আচার অনুষ্ঠান সূত্রে জানা যায় এখানে একদিনে তিন বার মাতৃ মূর্তি পুজো করার রীতি রয়েছে । ভোগ হিসাবে উৎসর্গ করা হয় খিচুড়ি , নয় রকমের ভাজা , তরকারি , পোলাও , মাছ , চাটনি , পায়েস , সুজি , মিষ্টি ইত্যাদি । তবে এবছর করোনা আবহে সামাজিক দূরত্বকে মান্যতা দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজবাড়ীর পুজো । এমনি পরিবর্তন করা হয়েছে পুজোর স্থান ।
SHOW MORE