
পাকিস্তান জানিয়েছে, জামাত-উদ-দাওয়ার তিন নেতা মালিক জাফর ইকবাল, আবদুল সালেম ও হাফিজ আবদুল রেহমান মাক্কিকে শুধুমাত্র ২৬/১১ মুম্বই হামলার জন্য নয়, সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের জন্যও গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০০৮ সালের মুম্বই হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত জামাত-উদ-দাওয়ার তিন জঙ্গি নেতাকে কারাদণ্ড দিল পাকিস্তান। সন্ত্রাসে অর্থ জোগানোর দায়ে পাকিস্তান আদালতে ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত জামাত-উদ-দাওয়া প্রধান হাউিজ সইদ। তাকে সাড়ে পাঁচ বছরের সাজাও শুনিয়েছে সে দেশের আদালত।
পাকিস্তান জানিয়েছে, জামাত-উদ-দাওয়ার তিন নেতা মালিক জাফর ইকবাল, আবদুল সালেম ও হাফিজ আবদুল রেহমান মাক্কিকে শুধুমাত্র ২৬/১১ মুম্বই হামলার জন্য নয়, সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের জন্যও গ্রেফতার করা হয়েছে। মালিক জাফর ও আবদুলকে সাড়ে ১৬ বছর এবং হাফিজ আবদুলকে দেড় বছরের সাজা শুনিয়েছে পাক আদালত।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, চারদিন ধরে মুম্বই শহরজুড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছিল দশ লস্কর জঙ্গি। সন্ত্রাসের বলি হয়েছিলেন ১৬৮ জন নিরপরাধ মানুষ, আহত হয়েছিলেন ৩০৮ জন। পাকিস্তান থেকে আরব সাগর পেরিয়ে মুম্বইতে ঢুকে পড়েছিল ওই দশ জঙ্গি। লিওপোল্ড কাফে, নরিম্যান হাইস, তাজ হোটেল, ছত্রপতি শিবাজী বাস টার্মিনাস, ট্রাইডেন্ট হোটেল, কামা হাসপাতাল-সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলা চলেছিল। তদন্তে জানা গিয়েছিল, পাকিস্তান থেকে এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তৈবা।
গত বছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি পাকিস্তানে গ্রেফতার করা হয়েছিল লস্কর-ই-তইবা প্রধান হাফিজ সইদকে। সন্ত্রাসবাদের প্রচার, জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অর্থ সাহায্য ইত্যাদি নানা অভিযোগে হাফিজের বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ হয়েছিল গুজরানওয়ালা আদালতে। পাকিস্তানের অ্যান্টি টেররিজম অ্যাক্টের (এটএ ১৯৯৭) ১১ ধারায় হাফিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে ওই পর্যন্তই। তারপর এত মাসেও হাফিজকে সাজা শোনানোর ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখায়নি পাকিস্তান। সূত্রের খবর, পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়া এই তিন জঙ্গি নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে হাফিজের।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে এবং জঙ্গিদের আর্থিক মদত দেওয়া বন্ধ করার ব্যাপারে নির্দেশিত পদক্ষেপগুলি করতে না পারলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে এফএটিএফ। জুন মাসে এফএটিএফ-এর ৩৯ সদস্য দেশের মধ্যে বৈঠক হয়। ভিডিও কনফারেন্সে সেই বৈঠকে এফএটিএফ জানায়, নির্ধারিত ২৭টি শর্তের মধ্যে ১৩টিই পালন করতে পারেনি পাকিস্তান। অতএব ধূসর তালিকার বাইরে রাখা যাবে না পাকিস্তানকে। সেই সঙ্গেই পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেওয়া হয়, লস্কর-ই-তৈবা অথবা জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলিকে আর্থিক সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ না-করলে কালো তালিকায় নেমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে পাকিস্তানকে।
অতীতে ইরান, উত্তর কোরিয়াকে কালো তালিকায় ফেলেছে এফএটিএফ। পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় ফেলা হয় ২০১৮ সালের জুন মাসের বৈঠকে। এফএটিএফ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ নম্বর ধারায় তালিকাভুক্ত বিশেষ করে লস্কর-ই-তৈবা, জামাত-উদ-দাওয়া, ফালাহ-ই-ইনসানিয়াতের মতো সংগঠন বা তাদের মাথার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি পাকিস্তান। পাকিস্তান অবশ্য দাবি করেছে তারা বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। জঙ্গিদের অর্থ জোগান বা ‘মানি লন্ডারিং’-এর তেমন কোনও প্রমাণই নেই।