
প্রতিনিধি :শরীরের ভেতর লড়াকু টি-কোষ সক্রিয় হয়েছে কিনা সেটা ধরে দেবে এক বিশেষ রকম পরীক্ষা পদ্ধতি। করোনার অ্যান্টিবডির উপরে ভরসা নেই। কারণ তিন মাসের মধ্যেই রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই করোনা সংক্রমণ হয়েছিল কিনা বা রোগের ঝুঁকি আছে কিনা সেটা ধরাই যাচ্ছে না। তাই এখন ভরসা টি-কোষ। ঘাতক টি-লিম্ফোসাইট কোষই করোনার যম। এই কোষ শরীরে কতটা অ্যাকটিভ সেটা বোঝার জন্য নতুন রকম পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বেঙ্গালুরুর দুই ডাক্তার।
ডাক্তারদের দাবি, রক্ত পরীক্ষা করে টি-কোষের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। কিন্তু চটজলদি টি-সেল ইমিউনিটি ধরতে পারার মতো কোনও পরীক্ষা পদ্ধতি এতদিন ছিল না। দেশে প্রথম এমন টেস্ট কিট বানিয়েছেন ডক্টর সোনাল আস্থানা ও ডক্টর বিষ্ণু কুরপাড়। এই গবেষণার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) অধ্যাপক নাগাসুমা চন্দ্র।
বেঙ্গালুরুর সিএমআই হাসপাতালের ডাক্তার সোনাল আস্থানা জানিয়েছেন, এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেলের সম্মতি পেলেই এই টেস্টের ট্রায়াল শুরু হবে। টি-সেল ইমিউনিটি টেস্ট করলেই বলে দেওয়া যাবে শরীরে ওই কোষ কতটা সক্রিয়। সেই বুঝেই কোন ব্যক্তিকে আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেটা ঠিক করবে ভ্যাকসিন রেগুলেটরি কমিটি।
এই টি-সেল ইমিউনিটি টেস্ট আসলে কী?
ডক্টর আস্থানা বলছেন, এতদিন সেরো সার্ভে করে বের করা হচ্ছিল কার শরীরে ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এই অ্যান্টিবডি দেখেই বোঝা যাবে করোনা সংক্রমণ কতজনের মধ্যে ছড়িয়েছে এবং কী পরিমাণে ছড়িয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব বেশিদিন হচ্ছে না। তিন মাস বা তার কম সময়েই ঝম করে রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই এই সময়ের পরে যদি কোনও ব্যক্তির টেস্ট করা হয় তাহলে ধরাই যাবে না তিনি আদৌ সংক্রামিত হয়েছিলেন কিনা বা ফের তার সংক্রামিত হওয়ার বা ‘রি-ইনফেকশন’-এর ঝুঁকি আছে কিনা। টি-সেল টেস্ট সেটাই বলতে পারবে। কারণ এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে রক্তে অ্যান্টিবডি নয় বরং টি-কোষের সংখ্যা নির্ণয় করা হবে।
সেটা কেন? ডক্টর আস্থানা বলছেন, যে কোনও ভাইরাস বা প্যাথোজেন শরীরে ঢুকলে তার প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে সাড়া দেয় শরীর, যাকে প্রাইমারি ইমিউন রেসপন্স বলে। ধীরে ধীরে রক্তের বি-কোষ সেই ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু করে। আর টি-কোষ মেমরি সেল তৈরি করে যা ভাইরাল স্ট্রেনকে ভাল করে চিনে নিয়ে তাকে আটকানোর মতো ব্যবস্থা তৈরি করে। বি-কোষ ও টি-কোষ উভয়েই অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি করে শরীরে। কিন্তু সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তার জীবনকাল খুবই কম। ভাইরাস তার জিনের গঠন বদলে শরীরের এই প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও নিজের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছে। তবে টি-কোষের সঙ্গে তারা ঠিক এঁটে উঠতে পারছে না। তাই অ্যান্টিবডি কমলেও টি-কোষ কিন্তু সক্রিয় থাকছে।
গবেষকরা বলছেন, টি-কোষের আবার নিজস্ব রিসেপটর থাকে(TCR) । এই রিসেপটরের কাজ হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রামক প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে তাদের ধ্বংস করা। এই টি-কোষও আবার রিসেপটর প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের হয়। সাধারণত CD8 রিসেপটর প্রোটিন যুক্ত হলে টি-কোষ সাইটোটক্সিক হয়ে ওঠে (Cytotoxic) । তখন তাকে বলে ঘাতক কোষ। এই কোষের কাজ হল ভাইরাল স্ট্রেন সহ গোটা সংক্রামিত কোষকেই নষ্ট করে ফেলা। বিজ্ঞানীরা এই ঘাতক টি-কোষকেই জাগিয়ে তুলতে চাইছেন। ডক্টর আস্থানা বলছেন, অ্যান্টিবডির পরিমাণ নির্ণয় করা যতটা সহজ, টি-কোষের সক্রিয়তা বোঝা ততটা সহজ নয়। এমন পরীক্ষা পদ্ধতি সবজায়গায় নেই। প্রথম এমন পদ্ধতিই নিয়ে আসছে তাঁরা। এই টেস্ট করলেই বোঝা যাবে কার শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে এবং টিকা দেওয়ার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।