ইলিশের সংখ্যা বাড়বে গঙ্গা মিশনে, পিছনে রয়েছে ব্যারাকপুরের সংস্থা

ব্যুরো: মাছের বাজারের বিক্রেতার সেই হাঁকডাক প্রায় শোনাই যায় না! টাটকা, চকচকে গঙ্গার ইলিশের পসরা নিয়ে শেষ কবে কলকাতা বা জেলার বাজারে হইহই পড়েছে তা অনেকেই মনে করে বলতে পারবেন না! ইলিশ মানেই বাঙালি এখন তাকিয়ে থাকে পেট্রাপোল, বেনাপোল সীমান্তের দিকে। তবে মাছে-ভাতে থাকা বাঙালি তথা ইলিশপ্রেমীদের সেই দুঃখ হয়তো ঘুচতে চলেছে। গঙ্গায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বড়সড় পরিকল্পনা নিল ন্যশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা তথা এনএমসিজি।

তিন বছরের মধ্যে ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রের এই প্রকল্প গাঁটছড়া বেঁধেছে ব্যারাকপুরের সংস্থা সেন্ট্রাল ইংল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। এনএমসিজি-র তরফে আশাপ্রকাশ করে বলা হয়েছে, তিন বছরের মধ্যে কার্যকরি ফলাফল পাওয়া যাবে।

এর জন্য ব্যবহার করা হবে উন্নত প্রযুক্তি। প্রাথমিক ভাবে ফারাক্কা ব্যারেজে মাছেদের শরীরে বাইরে থেকে লাগানো হবে ফ্লয় টি-বার অ্যাঙ্কর ট্যাগ। এই ট্যাগ সেনসর বেসড।

যে জায়গায় ইলিশের সঙ্গম হয় সেখানকার পরিবেশ আদৌ আদর্শ কিনা তা বোঝা যাবে সেনসরের মাধ্যমে। এনএমসিজি-র ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব রঞ্জন মিশ্র সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ইলিশের সঙ্গম স্থলে সেই ‘বায়ো ডাইভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠিত করাই মূল উদ্দেশ্য।

সমীক্ষায় বলছে, গত তিন বছরে গঙ্গার ইলিশের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে কমেছে। আপাতত ঠিক হয়েছে ফারাক্কায় তিরিশ হাজার ইলিশের শরীরে বাইরে থেকে ট্যাগ লাগানো হবে। তারপর সেনসর পদ্ধতিতে তাদের উপর মনিটরিং করবে ব্যারাকপুরের সংস্থাটি। পরীক্ষামূলক ভাবে এখনও পর্যন্ত ৪০২টি ইলিশের শরীরে হবে ফ্লয় টি-বার অ্যাঙ্কর ট্যাগ লাগানো হয়েছে।

ভারতে একমাত্র দুটি নদীতেই ইলিশ জন্মায়। এক গঙ্গা এবং দুই ব্রহ্মপুত্র। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশ জন্মানোর ক্ষেত্রে গঙ্গার জলের যে মান থাকা উচিত তার অবনমন হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ইলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করার পরই বোঝা যাবে ঠিক কী কী সমস্যা রয়েছে। সেই মতো করে পদক্ষেপ করবে ন্যশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা।

ইলিশের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকার কারণে চোরা কারবারও বাড়ছে। এমনিতেই এখন খোকা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ৫০০ গ্রাম ওজনের কম ইলিশ মাছ ধরা চলছে। বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে পাচার করতে গিয়ে গত এক বছরে দু’হাজার ৭০০ কেজির বেশি ইলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে বিএসএফ।

এই পরিস্থিতিতে ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোয় জোর দিল ক্লিন গঙ্গা মিশন। সব ঠিকঠাক থাকলে বাঙালির পাতে রুপোলি শস্যের বাড়ন্ত দশা কাটতে চলেছে শিগগিরই।