আনন্দপুর কাণ্ডে ‘নির্যাতিতা’র হবু স্বামীই অভিযুক্ত! তাকে বাঁচাতে প্রথম থেকেই মিথ্যে বলেছেন তরুণী

প্রতিনিধি : প্রেমিক তথা হবু স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরেই এত বড় কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায় পালাতে গিয়ে সেই প্রেমিকই ধাক্কা মেরে বসেছে উদ্ধারকারী মহিলাকে। আর এই সবটা দেখে বা জেনেও তা প্রথম থেকেই গোপন করে ছিলেন আনন্দপুরের ঘটনার নির্যাতিতা তরুণী। কারণ হবু স্বামীকে ‘বাঁচাতে’ চেয়েছিলেন তিনি।

শনিবার রাতে বাইপাসের ধারে এক তরুণীকে নির্যাতন ও তাঁর উদ্ধাকারী মহিলা নীলাঞ্জনাকে আহত করার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডাকে গ্রেফতার করে লাগাতার জেরা করার পরে এই তথ্যই সর্বতো ভাবে স্পষ্ট হয়েছে পুলিশের কাছে।

গোটা ঘটনাটা সামনে আসে রবিবার সকালে। জানা যায়, শনিবার রাতে আনন্দপুরে মায়ের কাছে গিয়েছিলেন এ শহরেরই বাসিন্দা নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ও মেয়ে। মায়ের জন্মদিন সেলিব্রেট করে রাত ১২টা নাগাদ সেখান থেকে ফেরার সময়েই ঘটে বিপত্তি। নিজেদের গাড়িতে কিছুদূর এগিয়েই তাঁরা বুঝতে পারেন, পিছনের একটি হন্ডা সিটি থেকে কোনও মেয়ের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। এটা শুনে স্বামীকে তাঁদের গাড়িতে করে পিছনের গাড়িটির পথ আটকাতে বলেন নীলাঞ্জনা।

পিছনের গাড়িটির পথ আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে হন্ডা সিটি থেকে এক তরুণীকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। তরুণীর জামা-কাপড় অনেক জায়গায় ছেঁড়া ছিল ও তাঁর চোখে-মুখে মারধরের চিহ্নও ছিল বলে পুলিশকে জানানো হয়। গাড়ি থেকে নেমে তরুণীকে তোলার চেষ্টা করেন নীলাঞ্জনা। এমন সময় হন্ডা সিটির চালক প্রবল গতিতে গাড়িটিকে ব্যাক গিয়ারে এনে পিষে দেওয়ার চেষ্টা করে। তার পরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় নীলাঞ্জনার ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় গাড়িটি। মাথাতেও সামান্য চোট লাগে তাঁর।

এর পরেই পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে অভিষেক পান্ডাকে। আর তখনই জানা যায়, নির্যাতিতা ওই তরুণী, যাঁকে বাঁচাতে গিয়ে নীলাঞ্জনা দেবী আহত, তিনি আসলে অভিষেকেরই হবু স্ত্রী। তাঁদের দুজনেরই প্রবল ঝগড়া শুরু হয়েছিল ওই রাতে, বাইপাসের ধারে গাড়ির ভিতর। ঝগড়া গড়ায় মারামারিতে, এর পরে ওই তরুণী জোর করে গাড়ি থেকে নেমে যেতে গিয়ে পড়ে যান এবং তাঁর পোশাকও ছিঁড়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে নীলাঞ্জনা এসে পৌঁছন। তরুণীর হবু স্বামী এসময়ে পালাতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা লাগে নীলাঞ্জনার সঙ্গে। এমনটাই অভিষেক স্বীকার করেছে পুলিশি জেরার মুখে। জানিয়েছে, তরুণীর মোবাইল, চাবি এসব তাঁর বাড়িতে ফেরত দিয়ে এসে সে বন্ধুর বাড়ি চলে যায়।

এদিকে নীলাঞ্জনাকে আহত অবস্থায় দেখে ওই তরুণী বুঝতে পারেন, বিপদ বাড়তে পারে। এদিকে অভিষেক চম্পট দেওয়ায় কী করবেন বুঝতে পারেননি। তাই প্রথম থেকেই পুলিশের কাছে মিথ্যে বলে এসেছেন। তিনি প্রথমে পুলিশকে জানান, কয়েক দিন আগে পরিচয় হওয়া অমিতাভ নামের এক যুবকের সঙ্গে ডেটে গিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই গাড়ির মধ্যে ওই যুবক তাঁর শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে বলে দাবি করেন। তিনি বাধা দিলে মারধর করে তাঁর জামা-কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ওই দম্পতি ঠিক সময়ে তাঁকে উদ্ধার না করলে কী হত সেটা ভেবেই আতঙ্কিত তিনি।

ওই তরুণী অভিষেকের নামটাও সত্যি বলেননি পুলিশকে, সম্পর্কের কথা তো নয়ই। উল্টে তিনিই অভিষেককে আগাম খবর দিয়ে গা ঢাকা দিতে বলেন।

পুলিশও প্রাথমিক ভাবে দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে।, কারণ তরুণী যে মিথ্যে বলছেন, তা কেউ ভাবতে পারেনি। শেষে তরুণীর কল রেকর্ডস ঘাঁটতে গিয়ে পুলিশ আবিষ্কার করে, অভিযুক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ছিল। এমনকি, ঘটনার পরেও তরুণী ফোন করেছিলেন অভিযুক্তকে। তখন জেরার মুখে তরুণী স্বীকার করেন যে, অভিযুক্ত তাঁর হবু স্বামী এবং তাঁর নাম অভিষেক কুমার পান্ডে।

শেষমেশ গোটা শহর কার্যত চষে ফেলার পরে সন্ধান মেলে অভিষেকের। মঙ্গলবার গ্রেফতার হয় সে।