বীরভূম: জামতারা গ্যাংয়ের দুই সদস্যকে বীরভূম থেকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা হাতানোর ব্যাপারে কুখ্যাত জামতারা গ্যাং। দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বুধবার বীরভূম থেকে গ্রেফতার করে এই গ্যাংয়েরই দুই সদস্যকে। বৃহস্পতিবার সিউড়ি আদালতে তোলা হলে পাঁচদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। দিল্লির রোহিনী আদালতে ফের তোলা হবে তাদের।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে ধৃত ব্যক্তিদের নাম রঞ্জিত দে। তার বাড়ি রাজনগর থানার মুক্তিপুর গ্রামে। অন্যজনের নাম প্রকাশ মণ্ডল। চন্দ্রপুর থানার বাঁশবুনি গ্রামে প্রকাশের বাড়ি। দিল্লির এক ব্যক্তির সঙ্গে ৬৩ হাজার টাকা জালিয়াতি করার মামলায় ওই দু’জনকে সিউড়ি শহরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জামতারা গ্যাংয়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো তারা। রঞ্জিতের অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়ে ফেলত জামতারা গ্যাংয়ের সদস্যরা। প্রকাশ, রঞ্জিতের মতো অ্যাকাউন্ট হোল্ডার জোগাড় করতো।
টাকা-পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত সাইবারক্রাইমের স্বর্গরাজ্য হল ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামতারা। পিছিয়ে পড়া এলাকা হলেও তাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের জেরে তটস্থ গোটা দেশ। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, মুম্বই থেকে মিজোরাম সর্বত্রই সক্রিয় জামতারা গ্যাংয়ের প্রতারণা চক্র।
পুলিশ জানিয়েছে, নাইজেরিয়া এবং রোমানিয়ার প্রতারকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এই গ্যাংয়ের। প্রথমদিকে এটিএম নম্বর এবং ওটিপি হাতিয়ে নিয়ে জালিয়াতি করতো তারা। ক্রমশ পুলিশের সতর্কবার্তায় সাধারণ মানুষ সচেতন হওয়ায় পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে তারা। অনলাইনে খাদ্য সামগ্রী জামাকাপড় থেকে প্রসাধনী সামগ্রী এবং ভোগ্যপণ্য কেনাকাটা প্রভৃতি ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা লেনদেনের সময় বা মোবাইলে ভুয়ো লিঙ্ক পাঠায় তারা। কোনও গ্রাহক সেই লিঙ্ক ক্লিক করলেই তার মোবাইল পুরোপুরি হ্যাক হয়ে যায় প্রতারকদের কাছে। বর্তমানে সেইভাবেই নতুন পন্থায় টাকাপয়সা হাতানো শুরু করেছে এই গ্যাং।
যদিও প্রতারকরা টাকা সরাসরি তাদের নিজের কাছে রাখে না। দশ শতাংশ কমিশনে রঞ্জিতদের মতো মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত তারা। অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের জোগাড় করতো প্রকাশ মণ্ডল। জামতারা এলাকায় পুলিশের ধরপাকড় ও কড়া নজরদারির জন্য আসানসোল, বীরভূম প্রভৃতি এলাকার মানুষজনকে এ কাজের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে ওই গ্যাং। ইতিমধ্যেই সেরকম প্রায় কুড়িটি অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে পুলিশ।
সিউড়ি আদালতের সহকারী সরকারি আইনজীবী কেশব দেওয়াসি বলেন, ‘‘প্রতারকরা প্রথমে প্রতারিত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে পেটিএমে ট্রান্সফার করে এবং সেখান থেকে সিউড়ি শহরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে রঞ্জিত মণ্ডলের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করে। সেই সূত্র ধরেই প্রতারকদের সহযোগী হিসেবে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ তাদের ট্রানজিট রিমান্ড চেয়ে সিউড়ি আদালতে আবেদন জানালে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।’’